Saturday, January 5, 2019

Brain Part 2 | কিছু জানা ও অজানা তথ্য ব্রেন সম্পর্কে

Brain Part 2

কিছু জানা ও অজানা   তথ্য ব্রেন সম্পর্কে



মানব সৃষ্টির অনাদিকাল থেকে মানব মস্তিষ্ক মানুষকে বিস্মিত ও হতবুদ্ধি করে চলেছে। অনেক বিজ্ঞানী এবং ডাক্তার মানব মস্তিষ্ক সম্পর্কে জানতে গিয়ে তাদের জীবনের পুরো সময় পার করে দিয়েছেন। এটা কোনো বিস্ময়কর ব্যাপার নয় যে মানুষ এই অবিশ্বাস্য রহস্যজনক অঙ্গ সম্পর্কে জেনে আনন্দ লাভ করছে। নিচে আপনি মানুষের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করছে, কীভাবে উন্নতি করছে, কীভাবে মানুষকেই নিয়ন্ত্রণ করছে, কীভাবে এটা ঘুম, স্বপ্ন, স্মরণশক্তির ওপর প্রভাব বিস্তার করছে এ রকম আরও অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন যা আপনাকে প্রভাবিত ও উপকারী করবে। এই বিস্ময়কর ও মজাদার তথ্যগুলো জেনে আপনি যাচাই করুন আপনার মস্তিষ্কের প্রখরতা।
Part 2



স্মরণশক্তি


৫২. ঘোর মন্থরতাঃ প্রায়শই ঘোর মন্থরতা আপনার স্মরণশক্তি যা সাধারণত চাপ সহনকারী হরমোনের নিঃসৃত হওয়ার কারণে ঘটে তার কারণ ঘটায়।


৫৩. নতুন যোগাযোগঃ প্রত্যেকটি সময় যখন আপনি নতুন কিছু নিয়ে ভাবেন বা পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করেন তখন প্রত্যেকবার মস্তিষ্কের সাথে আপনার নতুন যোগাযোগের ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়।

৫৪. সম্পর্ক সৃষ্টিঃ স্মরণশক্তি বিভিন্ন ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত। তাই আপনি যদি কোনো কিছু মনে রাখতে চান বা মনে করতে চান তবে তার সাথে কিছু সম্পৃক্ত করে মনে রাখুন।


৫৫. সুগন্ধি এবং স্মরণশক্তিঃ স্মরণশক্তি সুগন্ধ দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়। তাই যারা সুগন্ধিদ্রব্য ব্যবহার করেন তারা বেশি গভীর স্মরণশক্তিমূলক আবেগ পেতে সক্ষম হন।

৫৬. স্মরণশক্তির ব্যাহত তৎপরতাঃ অ্যাগোসিনা হচ্ছে এমন একটি শব্দ যখন আপনি কোনো একটি শব্দ জানেন এবং যা আপনার জিহ্বার ডগায় কিন্ত যখন আপনার বলা দরকার তখন মনে আসি আসি করেও আসছে না।


৫৭. ঘুমঃ যখন আপনি ঘুমিয়ে থাকেন তা হচ্ছে আপনার সবচেয়ে ভালো সময় যা আপনাকে সারা দিনের ক্লান্তি দূর করে সব ঘটনা মনে রাখতে সাহায্য করে।



৫৮. নিদ্রাহীনতাঃ নিদ্রাহীনতা আপনার মস্তিষ্কের নতুন কিছু সৃষ্টির ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।



৫৯. বিশ্বচ্যাম্পিয়নঃ স্মরণশক্তির ক্ষেত্রে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্যক্তি যার নাম বেন প্রিডমোর। তিনি মাত্র ৫ মিনিটে ৯৬টি ঐতিহাসিক ঘটনা মনে রাখতে পারতেন এবং ছাব্বিশ দশমিক দুই আট সেকেন্ডে পুরো তাশ হাত সাফল করতে পারতেন।


৬০. ইস্ট্রোজেন এবং স্মরণশক্তিঃ ইস্ট্রোজেন মস্তিষ্কের স্মরণশক্তির সক্রিয়তা বাড়াতে সাহায্য করে।


৬১. ইনসুলিনঃ ইনসুলিন দেহের রক্তে শর্করা কমাতে সাহায্য করে কিন্তু সামপ্রতিককালে বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে মস্তিষ্কে ইনসুলিন স্মরণশক্তির বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে।

ঘুম এবং স্বপ্ন

৬২. ঘুম এবং স্বপ্ন দেখে শুধু যারা স্বপ্ন মনে রাখতে পারে না তারা মনে করে তারা স্বপ্ন দেখে না। আসলে প্রত্যেকে স্বপ্ন দেখে।

৬৩. স্বপ্নের পরিমাপঃ বেশির ভাগ লোক ১-২ ঘণ্টা স্বপ্ন দেখে এবং প্রত্যেক রাতে প্রায় ৪-৭টা স্বপ্ন দেখে।

৬৪. চিন্তার অবসাদঃ যখন আপনি ঘুমিয়ে থাকেন তখন আপনার মস্তিষ্ক থেকে এমন একটা হরমোন নিঃসৃত হয় যা আপনাকে স্বপ্নের অতল গহ্বরে নিয়ে যায় কিন্তু আপনার সক্রিয় আঙ্গিক ক্রিয়া নিবারণ করে এবং আপনাকে ঘুমের রাজ্যে জড়িয়ে চেতনাহীন বা অবসাদগ্রস্ত করে রাখে।

৬৫. ক্ষয়িত বা হারানো স্বপ্নঃ স্বপ্নের ৫ মিনিট পর স্বপ্নের অর্ধেক স্মৃতি লোপ পায়। দশ মিনিট পর স্বপ্নের ৯০ ভাগ লোপ পায়। স্বপ্ন লিখে রাখুন যদি আপনি মনে রাখতে চান।

৬৬. মস্তিষ্কের তরঙ্গঃ সমীক্ষা প্রমাণ করেছে যে মস্তিষ্কের তরঙ্গ অধিক সচল থাকে যখন আপনি স্বপ্ন দেখেন এবং যখন আপনি জেগে থাকেন সেই সময় থেকেও।

৬৭. রঙঃ কিছু লোক প্রায় ১২ ভাগ লোক সাদা কালো স্বপ্ন দেখে যখন অন্যরা রঙিন স্বপ্ন দেখে।

৬৮. অন্ধ লোকও স্বপ্ন দেখেঃ স্বপ্ন হচ্ছে দৃশ্যমান কোনো বস্তু অপেক্ষা বেশি কিছু এবং অন্ধ লোকও স্বপ্ন দেখে। অন্ধ লোকটি স্বপ্নে ছবি দেখতে পারে কি না তা নির্ভর করে তারা জন্মকালীন অন্ধ বা জন্মের পর দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে কি না তার ওপর।

৬৯. নাক ডাকাঃ যদি আপনি নাক ডাকেন তবে আপনি স্বপ্ন দেখেন না।

৭০. স্বপ্নের সময়কালঃ স্বপ্নের সময় যদি আপনি জেগে যান তবে আপনি সারা রাত ঘুমালে স্বপ্ন যেটুকু মনে রাখতে পারতেন তা অপেক্ষা বেশি মনে রাখতে পারবেন।

৭১. চিহ্নঃ যারা স্বপ্নের মানে জানতে চান তাদের জন্য বলছি স্বপ্ন এমন কিছু উপস্থাপন করে যা আপনি ব্যক্তি জীবনে নন। অবচেতন মন চেষ্টা করে আপনার কাঙিক্ষত কোনো কিছুর সাথে সংযোগ ঘটাতে। তাই স্বপ্ন হচ্ছে এক ধরনের সংকেতময় প্রতিবেদন।

৭২. অ্যাডেনোসাইনঃ ক্যাফেইন দেহে অ্যাডেনোসাইন প্রবেশে বাধা দেয় এবং সতর্কতা সৃষ্টি করে। বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে এই ক্যাফেইন না খাওয়া স্বাভাবিক নিদ্রা এবং ইনসমনিয়া বা নিদ্রাহীনতা কমাতে সাহায্য করে।

৭৩. স্বপ্ন প্রদর্শনীঃ জাপানের গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন এমন এক যন্ত্র যা মনের চিন্তাভাবনার চিত্র দেখতে এমনকি স্বপ্নকে ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে দেখাতে সক্ষম।


সভ্যতার এক বিস্ময়কর তথ্য

৭৪. উড়োজাহাজ এবং মাথাব্যথাঃ একটি গবেষণা প্রমাণ করেছে উড়া এবং মাথাব্যথার মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে। বলা হয়েছে যারা প্লেন চালায় তাদের মধ্যে ৬ ভাগ লোক বেশি মাথাব্যথায় আক্রান্ত হয় যারা উড়োজাহাজে ভ্রমণ করছে তাদের অপেক্ষা।

৭৫. হাত সাফাইঃ ভোজবাজি বা জাদু দেখানো মস্তিষ্কের পরিবর্তন আনতে পারে সাত দিনের চেয়েও কম সময়ে। সমীক্ষণ দেখিয়েছে নতুন কিছু শেখা মস্তিষ্কে খুব দ্রুত পরিবর্তন আনতে পারে।

৭৬. ডিজনি এবং ঘুমঃ স্লিপ মেডিসিন নামক একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে যে কীভাবে মায়া ডিজনি খেলায় বিভিন্ন প্রাণীদের দিয়ে তাদের ঘুমের বিচ্ছেদ ঘটিয়ে খেলার নানা কৌশল শেখাতে গিয়ে।

৭৭. চোখ টেপাঃ প্রত্যেক সময় আমরা চোখের পাতা ফেলি এবং মস্তিষ্ক এটা করে এবং সব সময় সব কিছু দৃশ্যমান রাখাও যাতে পুরো পৃথিবী আমাদের সামনে অদৃশ্য না হয় যখন আমরা চোখের পাতা ফেলি। আমরা দিনের ভেতর প্রায় বিশ হাজার বার চোখের পাতা ফেলি।

৭৮. হাসিঃ কোনো কিছু শুনে বা দেখে হাসি পাওয়া এত সোজা নয় কারণ এর জন্য মস্তিষ্কের ৫টি অঞ্চলকে সক্রিয় হতে হয়।

৭৯. হাই সংক্রামকঃ কখনো লক্ষ করেছেন আপনার হাই তোলার পর আপনার চারপাশের লোকজন কী করছে? দেখা যাবে তারাও হাই তুলছে। কারণ বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন এটা প্রাচীন মানুষের সামাজিক আচরণের একটি অংশ।

৮০. মস্তিষ্কের সংরক্ষণঃ হার্ভার্ড প্রায় ৭০০০ মস্তিষ্কের সংরক্ষণ করেছেন।

৮১. বাহ্যিক এলাকাঃ মহাবিশ্বের ঘনত্বের হেরফের মস্তিস্ককে বিভিন্ন উপায়ে আঘাত করে। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন কীভাবে এবং কেন মানুষ চাঁদে পা রাখতে চায়।


৮২. গানঃ গান শুনলে বড় এবং ছোট উভয়ের মস্তিষ্কের ক্রিয়াশীলতা বুদ্ধি পায়।

৮৩. চিন্তাঃ মানুষের চিন্তা যা তারা বিশ্বাস করে তার সম্মুখীন হয় তারা প্রায় ৭০,০০০ বার।

৮৪. সব্যসাচীঃ যারা বামহাতি বা সব্যসাচী তাদের মস্তিষ্কের দুটি খণ্ডের সংযোজক অঙ্গ যার নাম করপাস কোলোসাম যেটি ১১ ভাগ বেশি চওড়া ডানহাতি লোকদের তুলনায়।

৮৫. চাপসম্পন্ন কাজঃ একটি সমীক্ষণে দেখা যায় প্রথমে হিসাবরক্ষক, তারপর লাইব্রেরিয়ান, তারপর বাস ও ট্রাকচালক সবচেয়ে বেশি মাথাব্যথায় ভুগে থাকে।

৮৬. অ্যারিস্টটলঃ অ্যারিস্টটল ভুলবশত ভেবেছিলেন মস্তিষ্কের সব কাজ হৃৎপিণ্ডে ঘটে।

৮৭. স্বজাতি ভক্ষণঃ কিছু পরীক্ষা প্রমাণ করেছে যে, মানুষের দেহে এমন কিছু জিন রয়েছে যা তাদের স্বজাতি ভক্ষণ রোগ থেকে দূরে রাখে। এ থেকে ধারণা করা হয় যে আদিকালের মানুষ তাদের নিজেদের মাংস ভক্ষণ করত।

৮৮. শেক্সপিয়ারঃ ব্রেইন শব্দটি শেক্সপীয়রের শেক্সপিয়ার প্রায় ৬৬ বার ব্যবহার করেছিলেন।

৮৯. আলবার্ট আইনস্টাইনঃ আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের আকার সাধারণ মানুষের মস্তিষ্কের আকারের সমান ছিল। শুধু মস্তিষ্কের যে অংশ গণিত এবং তৎসংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত সেটি আকারে ভিন্ন ছিল। ওই অংশটি প্রায় ৩৫ ভাগ চওড়া ছিল সাধারণ মানুষের তুলনায়।


৯০. লন্ডনের টেক্সি ড্রাইভারঃ লন্ডনের টেক্সি চালকরা বিখ্যাত ছিল লন্ডনের মতো বিশাল এলাকায় রাস্তাঘাট চেনার জন্য। তাদের মস্তিষ্ককে বলা হতো হিপোক্যাম্পাস বা বিশাল অঞ্চল। বিশেষত যারা অনেক দিন ধরে টেক্সি চালায়। এ জন্য যারা বেশি মনে রাখতে চায় তাদের মস্তিষ্ক ক্রমান্বয়ে বড় হতে থাকে।

৯১. সপ্তম লেনিনঃ লেনিনের মৃত্যুর পর তার মস্তিষ্ক পরীক্ষা করে দেখা গেছে তার মস্তিষ্ক অস্বাভাবিকভাবে বড় এবং কিছু অংশে অসংখ্য নিউরন রয়েছে যা ব্যাখ্যা দান করে তার তীব্র এবং আক্রমণাত্মক তীক্ষ্ন অত্যাচারী মনোভাবের এবং যার জন্য তিনি বিখ্যাত।

সবচেয়ে পুরাতন মস্তিষ্ক

৯২. পুরাতন মস্তিষ্কঃ ইংল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২০০০ বছর পুরানো মস্তিষ্কের সন্ধান পাওয়া গেছে।

৯৩. বেব রুথঃ কলম্বিয়ার মনোবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন ছাত্র বেবের মস্তিষ্ক পরীক্ষা করে দেখেছে যে,এতে প্রায় ৯০ ভাগ বেশি কাজের দক্ষতা সম্বন্ধীয় বস্তু রয়েছে যা সর্বাধিক মানুষের থাকে ৬০ ভাগ।

৯৪. ডানিয়েল ট্যামেটঃ ডানিয়েল ট্যামেট যে ছিল আত্মসংবেদী পণ্ডিত তার তিন বছর বয়সে মৃগী সংক্রান্ত অপারেশন ঘটে। তিনি তিন বছর বয়স থেকে গণিতে পারদর্শী ছিলেন এবং সাতটি ভাষা জানতেন এবং নিজে নিজে শব্দ বা ভাষা সৃষ্টিতে সক্ষম ছিলেন।

৯৫. কেউথ জ্যারেটঃ এই যাজক এবং গায়ক তিন বছর বয়স থেকে নিখুঁত ধর্ম উপদেশ দিতে পারত এবং বিজ্ঞানীরা তার মস্তিষ্ক পরীক্ষা করে দেখেছিল যে তার মস্তিষ্কে ডান দিকের সম্মুখ ভাগ কিছুটা উঁচু ছিল।

৯৬. ২০০০ অব্দঃ নৃবিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন যে ওই সময়ে মস্তিষ্কের খুলিতে ছিদ্র করার মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করা হতো।

৯৭. ১৮১১ : স্কটিশ সার্জন চার্লস বেল ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে প্রতিটি অনুভূতির একটি যোগাযোগ কেন্দ্র রয়েছে মস্তিষ্কে।

৯৮. ১৮৯৯ : অ্যাসপিরিন নামক ওষুধটি ব্যথা নিবারক হিসেবে বাজারজাত হয়েছিল কিন্তু ডাক্তারের নির্দেশ ছাড়া এটি নিষিদ্ধ ছিল ১৯১৫ সাল পর্যন্ত।

৯৯. ১৯২১ : হারমান রোরসাচ আবিষ্কার করেছেন বিখ্যাত ইনক ব্লট পরীক্ষা।

১০০. ১৯৫৯ : প্রথম ক্ষুদ্র লেজবিশিষ্ট বানর মহাশূন্যে পাঠানো হয়েছিল মানুষের আচরণ পরীক্ষার জন্য।

No comments:

Post a Comment