Tuesday, November 6, 2018

মানুষের মস্তি্ক সবথেকে জটিল কিন্তু কার্যকরী | Technology of Brain

মানুষের মস্তি্ক সবথেকে জটিল কিন্তু কার্যকরী


বহুদিন ধরে বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে গবেষণা করছেন। নিউরোসায়েন্টিস্টরা মস্তিষ্কের ( N
euroscientists of Brain )এই তথ্য ধারণের বিষয়টিকে বলেন
 ‘এপিডোসিক মেমোরি’ Episodic memory। বছরের পর বছর গবেষণার পর কিছুটা পরিষ্কার হয়েছে, মস্তিষ্ক কিভাবে এ কাজ করে।

মগজের বাইরের দিকের স্তরের নিচে ছোট একটি অংশ রয়েছে যার নাম হিপোক্যাম্পাস (Hippocampus )। 

মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার এর দৈর্ঘ্য। কিন্তু মস্তিষ্কের মূল অংশের সঙ্গে দারুণভাবে জড়িত। হিপোক্যাম্পাসের 
Hippocampus ) আশপাশের কয়েকটি অংশেই নতুন তথ্য বিশেষ প্রক্রিয়া সংরক্ষিত হয় বলে জানান ইউনিভার্সিটি অব লেসিস্টারের University of Leicester ) গবেষকরা। এপিলেপসিতে আক্রান্ত এক রোগীর মস্তিষ্কে সার্জারির সময় মস্তিষ্কের বিভিন্ন কোষ বিশ্লেষণের সুযোগ মেলে তাদের। 

হিপোক্যাম্পাসের একটিমাত্র কোষ প্রয়োজনে নতুন একটি জোট গঠন করতে পারে নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার জন্যে। 


মস্তিষ্কের বাইরের দিকে ভাঁজ হয়ে রয়েছে কর্টেক্স। এটি আকারে হিপোক্যাম্পাসের চেয়ে বড় এবং অসংখ্য কাজ করে। দেহের অঙ্গের নড়ন-চড়ন এর দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়। কিছু অনুভবের জন্যে, যেমন- সৈকতে বাতাস খাওয়ার সময় আমরা যা অনুভব করি তার জন্যে মস্তিষ্কের কর্টেক্স বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়া পরিচালনা করে। পুরনো বন্ধুকে চিনতে, পাখির ডাকে কান খাড়া করতে এবং আরামদায়ক বাতাসের অনুভূতি পেতে নানা কাজ করে কর্টেক্স। 


এ ধরনের অভিজ্ঞতা মস্তিষ্কে জড়ো হয়ে থাকে। এমন বহু অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি কর্টেক্সজুড়ে ছড়িয়ে থাকে। পুরনো কিছু মনে করার সময় এই অংশ থেকে তথ্যটা শুধুমাত্র খুঁজে নেয় মস্তিষ্ক। নিউরোলজিস্ট গিওর্গি বুসাকি ২০০৬ সালে প্রকাশিত ‘রিদমস অব দ্য ব্রেন’ বইয়ে লিখেছিলেন, কর্টেক্স হলো মস্তিষ্কের বিশাল লাইব্রেরি। আর হিপোক্যাম্পাস সেখানকার লাইব্রেরিয়ান।


নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে প্রকাশিত নতুন এক গবেষণাপত্রে বলা হয়, এফএমআরআই-এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের কোনো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার চিত্র দেখা সম্ভব হয়েছে। মানুষ কিভাবে পুরনো তথ্য মনে করে, হিপোক্যাম্পাসে তার প্রক্রিয়াটি দেখার চেষ্টা করেছেন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানী ড. আইডান হরনার এবং তার সহকর্মীরা। যদি আইফেল টাওয়ারে কোনো বন্ধুর সঙ্গে ঘোরার দৃশ্য স্মৃতিতে থাকে, তখন আপনাকে আইফেল টাওয়ারের ছবি দেখানো হলে আপনি ওই বন্ধুর কথাও মনে করবেন। স্মৃতিতে কিভাবে ভেসে ওঠে তার প্রক্রিয়াটির চিত্র ধারণ এখনো পরীক্ষাধীন হয়েছে। যদি কোনো মানুষের পরিচয় মনে করা চেষ্টা করেন, তখন সে স্থানে ওই মানুষটির সঙ্গ দেখা হয়েছিল তার কথাও মনে ভেসে ওঠে। প্রক্রিয়াটি নিয়ে বড় মাপের গবেষণা চলমান রয়েছে। মস্তিষ্কে যেভাবেই কাজটি করুক না কেন, জীবনটাকে আলো অর্থপূর্ণ ও সুন্দর করতে এটি দারুণ এক পদ্ধতি।

আমাদের মস্তিষ্কে তথ্য সংরক্ষিত হওয়ার পূর্বে মস্তিষ্ক নির্ধারণ করে তথ্যের প্রকৃতি। মস্তিষ্কের এই ধারণকৃত স্মৃতি মুলত তিন প্রকার।


১। সংজ্ঞাবহ স্মৃতিঃ সংজ্ঞাবহ স্মৃতি হচ্ছে সেই তথ্য যা এক সেকেন্ডেরও কম সময়ের জন্য অনুভুত হয়।

২। স্বল্প মেয়াদী স্মৃতিঃ এ ধরণের স্মৃতিকে কার্যরত স্মৃতি বলা হয়।

৩। দীর্ঘ মেয়াদী স্মৃতিঃ দীর্ঘ সময়ের জন্য ধারণকৃত স্মৃতি, যা পরবর্তীতে প্রয়োজনে মস্তিষ্ক আবার পুনরাবৃত্তি করে।

আমাদের মস্তিষ্ক সংজ্ঞাবহ স্মৃতি গ্রহণ করলেও তা খুব বেশি সময়ের জন্য ধারণ করে রাখে না। স্বল্প মেয়াদী স্মৃতি মস্তিষ্ক একটু দীর্ঘ সময়ের জন্য ধারণ করে রাখলেও এক সময় এ ধরণের স্মৃতি মস্তিষ্ক মুছে ফেলে। দীর্ঘ মেয়াদী স্মৃতি মস্তিষ্ক ধারণ করে রাখে দীর্ঘ সময়ের জন্য। পরবর্তীতে প্রয়োজনে এই ধরণের স্মৃতি বা তথ্য পুনরাবৃত্তি করে।

প্রাথমিক স্তরে তথ্য মস্তিষ্কে নিউরনের মধ্যে সংযোগ বিন্দুতে আণুবীক্ষণিক রাসায়নিক পরিবর্তন হিসেবে সংরক্ষিত হয়। আমাদের মস্তিষ্কে প্রায় ১০০ বিলিয়ন নিউরন আছে। সেই ১০০ বিলিয়ন নিউরন আবার ১০,০০০ নিউরনের সাথে সংযুক্ত। সুতরাং আমাদের মস্তিষ্কে আনুমানিক ১০০ ট্রিলিয়নের মত সংযুক্ত সিন্যাপ্স আছে। আমাদের মস্তিষ্কের নিউরাল সার্কিট এবং নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়ে যখন তথ্য প্রবাহিত হয়, নিউরনের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া শক্তিশালী বা দুর্বল হওয়ার জন্য সংযোগ পয়েন্ট সৃষ্টি করে। সিন্যাপ্সের শক্তিশালী বা দুর্বলতার মাধ্যমে মস্তিষ্ক তথ্য সংরক্ষণ করে। এই প্রক্রিয়াকে দীর্ঘমেয়াদী পটেনশন বা LTP বলা হয়।

হিপোক্যাম্পাস মানব মস্তিষ্কের এক বিশেষ অংশ যার বিশেষত্ব মানুষের স্মৃতি (আত্মজীবনীমূলক, ব্যক্তি, স্থান, ঘটনা), অনিয়মিত স্মৃতি বিধিবদ্ধ করে এবং গঠন করে। কিছু বিজ্ঞানীর মতে, আমাদের স্মৃতি সাময়িকভাবে হিপোক্যাম্পাসে থাকে এবং পরবর্তীতে 'স্মৃতি একত্রীকরণ' প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মস্তিষ্কের বাকি অংশে এই স্মৃতি পুনরায় কোডেড এবং বিচ্ছুরিত হয় যা সাধারণত ঘুমের মাঝে হয়ে থাকে। এই সুনিদিষ্ট উপায়ে স্মৃতি বিলিয়ন বিলিয়ন সিন্যাপ্সে কাঠামোগতভাবে অনবরত উপস্থাপিত হচ্ছে।

দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি এবং আচরণগত দক্ষতা মস্তিষ্কের সর্বত্র অত্যন্ত অপ্রয়োজনীয় এবং দক্ষভাবে সংরক্ষণ করা হয়। বাস্তবিক জ্ঞান এবং আচরণগত দক্ষতা স্মৃতি বিভিন্ন সিস্টেমের মধ্যে সংরক্ষণ করা হয়। স্বল্পমেয়াদী মেমরি সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে কাজ করে। একটি মোবাইল নাম্বার যত সহজে মনে করা যায় ঠিক তত দ্রুতই ভুলে যাওয়া যায়। আমাদের স্মৃতি স্বল্পমেয়াদী স্মৃতি থেকে দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিতে যেতে পারে।
Collected 

No comments:

Post a Comment